শীতে ডায়াবেটিস রোগীর যত্ন

শীতে ডায়াবেটিস রোগীর যত্ন

সঠিক খাদ্যাভ্যাস, জীবনধারা নিয়ন্ত্রণ এবং কায়িক পরিশ্রম—এই তিনের পাশাপাশি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পরিমাপ করে ইনসুলিন বা ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।

কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে শীত আসি আসি করছে। এ সময়ে পিঠাপুলি, খেজুরের রসের পায়েস, বিভিন্ন মিষ্টান্নসহ উপাদেয় খাবারের ধুম পড়ে। কিন্তু এসব খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। তা ছাড়া শীতের কারণে নিয়মিত হাঁটা বা শরীরচর্চা করা হয়ে ওঠে না। ফলে হঠাৎ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে ডায়াবেটিস। এ সময়ে মানুষের সর্দি-কাশি, টনসিলাইটিস, নিউমোনিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ—অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট বাড়ে। এ ছাড়া আর্থ্রাইটিস বা বাতব্যথা, হার্টের সমস্যার প্রকোপ বাড়ে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে এসব রোগের জটিলতা আরও বেড়ে যায়।

মনে রাখবেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সারা বছরই জরুরি। মিষ্টি জাতীয় খাবার, গুড়, চিনি বা রসের তৈরি পিঠাপুলি ও পায়েস এড়িয়ে চলুন। কোনো উৎসব বা দাওয়াতে অংশ নিলে ডেজার্ট ও কোল্ড ড্রিংকস বাদ দিন। বেছে নিন সালাদ, সবজি, রোস্ট, গ্রিল্‌ড জাতীয় খাবার। প্রতিদিন অন্তত কিছু সময়ের জন্য হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন। তীব্র শীতে ভোরের দিকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। এ সময় উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকি বেশি। তাই শীতে কুয়াশার মধ্যে না হেঁটে, একটু রোদ উঠলে হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করা উচিত। সকালের হালকা মিষ্টি রোদে আপনার দেহের সঙ্গে মনও হয়ে উঠবে চনমনে। তা–ও না পারলে বিকেলে বা দিনের অন্য যেকোনো সময়ে হাঁটতে পারেন। তবে একদম খালি পেট বা ভরা পেটে হাঁটা বা ব্যায়াম করা উচিত নয়।

এ সময় বাজারে প্রচুর শাকসবজির জোগান থাকে। বেশি করে শাকসবজি ও ফল খান। এসবের মধ্যে বিদ্যমান ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের সজীবতা বজায় রাখে এবং খাদ্য হজমে সাহায্য করে। শরীরের নিস্তেজ ভাব কাটায়। টাটকা ফল ও সবজিতে রয়েছে বায়োটিন যা ত্বক ও চুল ভালো রাখে। পান করুন পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি। পায়েস, পিঠাপুলি বা মিষ্টান্ন যদি খেতেই মন চায়, তাহলে চিনি বা গুড়ের বদলে কৃত্রিম মিষ্টকারক দ্রব্য, যেমন সুক্রলোজ, অ্যাসপারটেম প্রভৃতি ব্যবহার করুন।

শীতকালীন ঠান্ডা ও শুষ্কতা ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। মারাত্মক পরিণতি এড়াতে ডায়াবেটিস রোগীরা প্রতিদিন পা পর্যবেক্ষণ করুন। ত্বকে কোনো ফাটা, ক্ষত, রঙে পরিবর্তন বা ব্যথা আছে কি না, লক্ষ্য করুন। সঠিক মাপের জুতা পরুন, পা শুষ্ক রাখুন। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, কিন্তু পায়ের আঙুলের ফাঁকে অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন না। উষ্ণ জলে পা ডোবানো, বৈদ্যুতিক কম্বল, হিটিং প্যাড ও রেডিয়েটর ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকুন।